» » 'নিধন করা জাটকা জব্দ করার চেয়ে জাটকা ধরতে না দেয়াটাই হচ্ছে সফলতা'

জেলেরা যাতে নদীতে নামতে না পারে, জাটকা ধরতে না পারে সেটাই হবে অভিযানের সফলতা। কিন্তু জাটকা যদি ধরেই ফেললো, আর সেই নিধন করা জাটকা জব্দ করার মাঝে কী ই বা কৃতিত্ব রয়েছে। অভয়াশ্রমকালীন জেলেরা যাতে নদীতে না নামতে পারে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরালো অভিযান না চালিয়ে বা সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিধন করা জাটকা ধরায় ব্যস্ত হয়ে পড়লে তো সরকারের উদ্দেশ্য সাধিত হবে না এবং জাটকাও রক্ষা হবে না। এতে অভিযানের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে। জাটকা রক্ষায় অভিযানের ধরণ দেখে অভিযানের সফলতা নিয়ে সচেতন মহল এমনই প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, নিধন করা জাটকা জব্দ করার মাঝে কোনো সফলতা নেই, বরং জাটকা যাতে না ধরতে পারে সেটাই হবে অভিযানের সফলতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কৃতিত্ব। খোদ চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারই এ ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল বলেছেন, জাটকা যদি ধরেই ফেললো তাহলে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেছেন, ডাঙ্গায় মরা মাছ ধরার কোনো সফলতা নেই। কোনো জেলে নদীতে যাতে নামতে না পারে সেদিকে অভিযান জোরদার করতে হবে।
ইলিশ সম্পদ রক্ষায় পুরোপুরি জাটকার মৌসুম মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস পদ্মা-মেঘনায় অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী এবং লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ' কিলোমিটার মেঘনার অববাহিকায় এবং ভোলা লালমোহনসহ বৃহত্তর বরিশাল এলাকায় পদ্মা নদীতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাল ফেলা নিষিদ্ধ থাকে। জাটকা রক্ষায় এই দুই মাস নদীতে কোনো জাল ফেলা যাবে না। আর এটাই হচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম। এই দুই মাস জেলেরা যাতে নদীতে না নামতে পারে সে জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হয়। বিশেষ করে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের উপর বিশেষ দায়িত্ব থাকে এ বিষয়টিতে। যেহেতু নদীর বিষয়টি তাদের উপরই বর্তায় বেশি। আর এই দুই মাস জেলেদের পুনর্বাসনে সরকার থেকে জেলে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছের অভয়াশ্রম চলছে। এই অভয়াশ্রম শেষ হতে আর ক' দিন রয়েছে। কিন্তু এই অভয়াশ্রমের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেখা গেছে যে, কোস্টগার্ড প্রায় প্রতিদিনিই বিপুল পরিমাণ জাটকা আটক করেছে। পাশাপাশি নৌ পুলিশও আটক করছে। জাটকা পাচারকালে যাত্রীবাহী লঞ্চে অভিযান চালিয়ে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ জাটকাগুলো আটক করে। আর আটককৃত জাটকা মৎস্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়। তবে আটককৃত জাটকাগুলো চাঁদপুর অঞ্চলের খুবই কম। অধিকাংশই বরিশাল অঞ্চলে ধরা। সচেতন জনগণের পরামর্শ হচ্ছে : নিধনকৃত জাটকা জব্দ করার চেয়ে জেলেরা যাতে নদীতে নামতে না পারে সেদিকে অভিযান জোরদার করা প্রয়োজন। চাঁদপুরের মৎজীবী এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরাও তাই বললেন।
গত ২ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপি। সভায় অভয়াশ্রম সংক্রান্ত আলোচনায় পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, এ জেলার মেঘনায় ৮/১০টি পয়েন্ট রয়েছে যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা ধরা পড়ে। সেসব পয়েন্টে সম্মিলিতভাবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অভিযান চালানো দরকার যাতে কোনো জেলে নদীতে নামতে না পারে। অভিযানের খবর পেয়ে জেলেরা পালিয়ে গেলেও তাতে মন্দ কি। অন্তত জাটকা ধরা থেকে তো রক্ষা পেলো। কিন্তু জাটকা ধরে ফেলার পর ডাঙ্গায় সে মরা মাছ আটক করার মাঝে তো কোনো কৃতিত্ব নেই এবং কোনো লাভও নেই। নদীতে যাতে কোনো জেলে নামতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। পুলিশ সুপারের এ বক্তব্যে উপস্থিত সকলে সমর্থন জানান। তাঁর এ বক্তব্যটি পরদিন স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর সচেতন মহল এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবে। তারাও বলছেন, আসলে যে অভিযান হচ্ছে তাতে প্রকৃত সফলতা আসছে না। নদী সংলগ্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য বিভাগসহ সরকারের আরো কিছু সংস্থার সমন্বয়ে পালাক্রমে দিনে-রাতে নদীতে অভিযান জোরদার করা হলে আর জেলেরা নদীতে নামতে পারবে না। এতে করে জাটকাও রক্ষা পাবে। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে বিচক্ষণতার সাথে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ জানান সচেতন মহল।

About Azad Hossain

MD Azad Hossain. Simple Blogger on Blogspot. Blogger Address: BD Blogger Tamplate I Our Shahrasti I Our Chandpur/
«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply

চাঁদপুর জেলার প্রামান্যচিত্র