» » » » » শাহরাস্তিতে একটি বট গাছকে ঘিরে ধর্ম ব্যবসা ও প্রতারণা!

শাহরাস্তি উপজেলার সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শোরসাক পূর্বপাড়া মাঠে জন্ম নেয়া একটি বট গাছকে ঘিরে ধর্ম ব্যবসা ও প্রতারণার ডাল-পালা গজিয়েছে। কথিত মসজিদ, মাদ্রাসা, অসহায় প্রতিবন্ধী আশ্রম ও এতিমখানা কমপ্লেক্সের নামে সরকারের প্রায় ১৮ শতাংশ জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ওই বট গাছকে অলৌকিক আখ্যা দিয়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কুচক্রী মহল।

    জানা যায়, ওই মাঠের ফসলী জমির মাঝখানে একটি বট গাছকে ঘিরে সরকারের ২০ শতাংশ খাস জমি রয়েছে। রোদ-খরা ও বর্ষায় কৃষকগণ একটু প্রশান্তির আশায় ওই গাছের ছায়াতলে বসতো। এলাকাবাসী জানায়, ৬/৭ বছর আগে শোরসাক গ্রামের জুনাব আলীর পুত্র জসিম উদ্দিন বট গাছে অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে মর্মে দাবি করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও গাছকে ঘিরে ওয়াজ মাহফিল শুরু করে। এ স্থানে হাফেজিয়া মাদ্রাসা, জামে মসজিদ, এতিমখানা, দুঃস্থ-অসহায় প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে দাবি করে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, মোটর শ্রমিক এমনকি নিন্মবিত্তের কাছ থেকে মোটা অংকের দান-অনুদান গ্রহণ করে। এছাড়াও রয়েছে ছোট-বড় দান বাক্সের বহর।
    স্থানীয়রা জানায়, কোনমতে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়া স্বল্প শিক্ষিত যুবক তার রসালো-রসনায় প্রথমে বীমা পেশা হতে শুরু করে বিভিন্ন এনজিও ও সমবায় সমিতির মাধ্যমে এলাকা হতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এক সময়কার আলোচিত জুয়াড়ি জসিম জুয়া খেলায় সর্বস্ব খুইয়ে দিশেহারা হয়ে কখনো চায়ের দোকান আবার কখনো ভাতের দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে দেখা গেছে। সবশেষে পোষাক পাল্টিয়ে দাড়ি-টুপি ধারণ করে বট গাছ হতে বের হওয়া শিকল জড়িয়ে ধরে সাধারণ থেকে বনে যায় ফকির আস্তানার মোতাওয়াল্লি ওরফে শিকল হুজুর। তাছাড়াও জসিম উদ্দিনের অর্থ কেলেঙ্কারীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তারা।
    সরেজমিনে গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় আলোচিত ফকির আস্তানায় গেলে ওই স্থানে দরজা বন্ধ একটি টিনের দোচালা ঘর যা জামে মসজিদ নামে পরিচিত। পাশেই একটি একচালা যা কাগুজে কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্ষার শুরু হতে সপ্তাহে একদিন জুমা’র নামাজ ছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়না। স্বল্প সময়ের জন্য চালুকৃত মক্তবটি (মসজিদের ভিতর) বন্ধ হয়ে গেছে ৩/৪ মাস আগে।
    বিভিন্ন দান-অনুদানের এতো টাকা পয়সা কোথায় যায়, জানতে চাইলে আস্তানার পরিচালনা কমিটির সদস্য পরিচয়দানকারী মোঃ আবু হানিফ জানায়, মসজিদ তৈরিতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। মাদ্রাসা ঘর নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩১ হাজার টাকা। এছাড়া ৬০ হাজার টাকা আস্তানার নামে করা ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, জসিম উদ্দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে উত্তোলিত টাকাগুলো রাতের পর রাত জুয়া খেলে নষ্ট করেছে। যে কারণে তার ধার দেনা পরিশোধের লক্ষ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা চলছে।
    আস্তানার খাদেম হাফেজ মোঃ রেহান উদ্দিন জানান, এখানে কোনো পরিচালনা কমিটি নেই। জসিম উদ্দিন একাই এই কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারী, ক্যাশিয়ারসহ সকল পদধারী। মাহফিলের সময় বিভিন্ন ধরণের লোকদের আনা-গোনা ও বিভিন্ন টাইপের লোকদের দিয়ে মাহফিল চালানো হয়। মাদ্রাসা ঘর নির্মাণে আমি নিজে ৩১ হাজার টাকা ধার করেছি যা আজো পরিশোধ করা হয়নি। আস্তানার নামে ব্যাংকে কোনো টাকা গচ্ছিত নেই। মাহফিলের নামে ৪/৫ ধরনের লিফলেট তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন লোকদের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি সাজিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। বট গাছের অলৌকিক শিকল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, এক সময় বট গাছের সাথে মুরুব্বিরা শিকল দিয়ে হারিকেন বেঁধে রাখতো, কালক্রমে গাছের বেড় বৃদ্ধি পেয়ে ওই শিকলটি গাছের ভিতর আটকে গেছে।
    এ ব্যাপারে জসিম উদ্দিন ওরফে শিকল হুজুরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
    এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে উল্লেখিত স্থানে কোনো এতিমখানা, অসহায় প্রতিবন্ধী আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম নেই বলে জানা যায়।

About Azad Hossain

MD Azad Hossain. Simple Blogger on Blogspot. Blogger Address: BD Blogger Tamplate I Our Shahrasti I Our Chandpur/
«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply

চাঁদপুর জেলার প্রামান্যচিত্র