হাজীগঞ্জে বার বার যৌতুক দাবি করে স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে হাছান শেখ প্রকাশ সুজন ও তার পরিবার। বিবাহের সময় মেয়ের বাবা-মা স্বর্ণ ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দিয়ে তাদের মেয়েকে বিয়ে দেয় । বিয়ের কয়েক মাস পর বেরিয়ে আসে যৌতুক লোভী স্বামীর প্রকৃত চেহারা।
জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের শ্রীকালিয়া গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির মাহবুব ভূঁইয়ার মেয়ে সাথী আক্তারের সাথে ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক ২০১৩ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৯নং গন্ধব্যপুর ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের শেখ বাড়ির কামাল শেখের ছেলে হাছান শেখ প্রকাশ সুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। সে সময় সাথীর বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ৪ ভরি স্বর্ণ এবং বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে থাকেন। ওই সময় হাছান হাজীগঞ্জ বাজারের(পশ্চিম বাজারের শেখ মার্কেটে) জুতার ব্যবসা করতো। ব্যবসা সুবিধা করতে না পেরে বিদেশ যাওয়ার জন্য জুতার ব্যবসা ছেড়ে দেয়। বিদেশে যাওয়ার টাকা যোগার করতে হাছান তার শ্বশুরের কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে । হাছানের শ্বাশুরী জাহানারা বেগম মেয়েকে সুখী দেখতে স্বামী মাহবুব ভূঁইয়ার কাছ থেকে মেয়ের জামাইকে বিদেশ যাওয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা দেয়। গত বছরে শ্বাশুড়ির কাছ থেকে টাকা নিয়ে হাছান শেখ প্রবাসে পাড়ি জমায় । চলতি বছরে হাছান শেখ কর্মক্ষেত্রে নিজকে মানিয়ে রাখতে না পেরে দেশে ফিরে আসে । পুনরায় বিদেশ যাবে বলে হাছান তার স্ত্রী সাথীকে বাপের বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলে। এই টাকা এনে দিতে পারবেনা বলে জানালে পাষ- স্বামী হাছান সাথীর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এভাবেই সাথীর উপর স্বামী হাছান বিভিন্ন অজুহাত ধরে যৌতুকের ২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য শারীরিক ও অমানুসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে । সাথী ও হাছানের সংসারে একটি ফুটফুটে শিশু সন্তান জন্ম নেয় । যার বয়স ২ বছর ৫ মাস। এই শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সাথী আক্তার স্বামী এবং শ্বশুর কামাল শেখ, শাশুড়ি শাহানারা বেগম ও ননদ জাহানারা আক্তারের পাশবিক নির্যাতন সহ্য করে যায় ।
তারই ধারাবাহিকতা গত ২২ জুলাই শুক্রবার ভোর রাত ৪ টায় স্বামী হাছান তার মা শাহানারা বেগম ও বোন জাহানারা আক্তারের কু-প্ররোচনা সাথীকে লাঠিধারা এলোপাতাড়ি পিঠিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তারা সাথীকে গুরতরবস্থায় আটকিয়ে রাখে । খবর পেয়ে সাথীর মামা আবুল হোসেন খাঁন সাথীর শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান নেন । তিনি ওই বাড়িতে অবস্থান নিলে হাছানসহ তার পরিবারের লোকজন আবুল হোসেনকে ডাকাত আখ্যায়িত করে মারধর করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। পরে তিনি হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তা ভাগ্নি সাথীকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে ভর্তি করায়। বর্তমানে সাথীর অবস্থা আশঙ্কা জনক রয়েছে ।
এ ঘটনায় সাথীর মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানা ৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । অভিযুক্তরা হলেন ঃ হাছান শেখ প্রকাশ সুজন, বোন জাহানারা, মা শাহানারা বেগম ও বাবা কামাল শেখ।
এ প্রসঙ্গে সাথীর মা জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ের বিয়ের সময় ৪ ভরি স্বর্ণসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে থাকি। পরে মেয়ে জামাই বিদেশ যাবে বলে ৫ লাখ টাকা দেই। কিন্তু জামাই হাছান বিদেশ না গিয়ে এলাকা ঘুরে টাকাগুলো অপচয় করে ফেলে। আবারও জামাই হাছান আমার মেয়েকে ২ লাখ টাকা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে দিতে বলে। এই টাকা আমাদের থেকে মেয়ে নিয়ে না দেয়ায় মেয়েকে তারা সকলে মিলে শারীরিক নির্যাতন করে।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক আঃ মান্নান কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে এসেছি । এখন দেখি উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসে বিষয়টি সমাধান করা যায় কি না।
No comments: